খুলনা:
পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার বলেছেন, “আমাদের দিয়ে কাজ আদায় করে নিন, কিন্তু দূরে সরিয়ে দেবেন না। আমি সরে গেলে আরেকজন তো আসবে, তাঁকে দিয়ে তো কাজ করাতে হবে।”
মঙ্গলবার দুপুরে কেএমপি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। চলমান আন্দোলন এবং তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি ঘুরে ফিরে আসায় তিনি বলেন, “পুলিশ পদত্যাগ করতে পারে না। তবে কর্তৃপক্ষ চাইলে আমাকে প্রত্যাহার করতে পারে বা অন্য কোথাও পদায়ন করতে পারে।”
পদত্যাগের দাবি ও কমিশনারের প্রতিক্রিয়া
খুলনায় গত ২৫ জুন থেকে কেএমপি কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চলছে। এ সম্পর্কে কমিশনার বলেন, “আমার ইচ্ছা, আমি খুলনাবাসীর জন্য কাজ করতে চাই। সত্যি সত্যি আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটাতে চাই।” তিনি আরও বলেন, “আমাকে যদি ‘আনফ্রেন্ড’ করেন, তবে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভেঙে যাবে, যা খুলনাবাসীর জন্য ক্ষতিকর হবে।”
কমিশনার আরও বলেন, “আমার আন্তরিকতার ঘাটতি আছে কি না, সেটা আপনারা বিবেচনা করবেন, তবে পুলিশকে যদি দূরে ঠেলে দেন, তাহলে তাঁদের দিয়ে ভালো কাজ করানো কঠিন হবে।”
হত্যাকাণ্ড ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
খুলনা মহানগরী এলাকায় গত ১০ মাসে ২৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ২২টি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কমিশনার জানান, হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ইজিবাইক চুরি, মাদক, আধিপত্য বিস্তার, পরকীয়া সম্পর্ক এবং পারিবারিক কলহসহ নানা কারণে ঘটনা ঘটেছে।
মাদকবিরোধী অভিযান
জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, “মাদক আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করছে। মাদক বিক্রেতা, বাহক এবং খুলনায় মাদক সরবরাহকারীদের ওপর পুলিশের নজরদারি অব্যাহত থাকবে।” তিনি জানান, গত সপ্তাহে হরিণটানা থানা এলাকা থেকে ১৯ হাজার ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়েছে এবং নিয়মিত অভিযানে মাদক উদ্ধার করা হচ্ছে।
ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ ও প্রশিক্ষণ উদ্যোগ
খুলনায় প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ হাজার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচল করে, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ বাইরের এলাকা থেকে আসে। কমিশনার বলেন, “ইজিবাইক চালকদের ট্রাফিক আইনের যথাযথ জ্ঞান না থাকায় যানজট বাড়ছে। তবে কেএমপির পক্ষ থেকে সাড়ে ছয় হাজার চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে বাকি চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে।”
তিনি আরও জানান, খুলনায় ইজিবাইককে রাজশাহীর আদলে দুই রঙে ভাগ করে এক দিন পরপর চালানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে এবং এ বিষয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
পুলিশের প্রতি আহ্বান
এ সময়, কেএমপি কমিশনার জনসাধারণ ও পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান, “সন্ধ্যার পর সন্তানদের বাইরে না যেতে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। তারা যেন পড়ার টেবিলে ফিরে আসে, সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে।”
তিনি শেষপর্যন্ত বলেন, “আমি এখানে কাজ করতে চাই, তবে মানুষের মনোবল যদি ভেঙে যায়, তাহলে আমাদের কাজ করতে কঠিন হবে।”
