29 C
Dhaka
Saturday, July 26, 2025
spot_img

চট্টগ্রাম মেডিকেলে চালু হলো আরও ৩০ শয্যার আইসিইউ, জনবল সংকট রয়ে গেছে চ্যালেঞ্জ হিসেবে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:


চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে দীর্ঘদিনের আইসিইউ সংকট কিছুটা লাঘব হলো সম্প্রতি চালু হওয়া ৩০টি নতুন আইসিইউ শয্যার মাধ্যমে। ফলে বর্তমানে চমেক হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা দাঁড়াল ৬০টি। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য এটি নিঃসন্দেহে স্বস্তির খবর। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শয্যা বাড়লেও সেবা নিশ্চিতে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রয়োজনীয় জনবল সংকট।

আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন নতুন ইউনিট

হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ইউনিট-১-এ নতুন অবকাঠামো তৈরি করে এই ৩০ শয্যার ইউনিট চালু করা হয়। আগে এই ইউনিটে ছিল মাত্র ১৮টি শয্যা। এর আগে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হাসপাতালের নিচতলায় ইউনিট-২-এ আরও ৩০টি আইসিইউ শয্যার একটি ইউনিট চালু হয়েছিল। সব মিলিয়ে এখন হাসপাতালের ২,২০০ শয্যার মধ্যে ৬০টি শয্যা আইসিইউ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

শয্যা বাড়লেও জনবল সংকট পুরনো সমস্যাই রয়ে গেছে

আইসিইউ পরিচালনার মূল চালিকাশক্তি হলো অভিজ্ঞ নার্স, মেডিকেল অফিসার ও সহায়ক কর্মী। তবে এখানেই রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জ। চমেক হাসপাতালের ৬০টি আইসিইউ শয্যার জন্য কর্মরত আছেন মাত্র ৬৭ জন নার্স, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক ক্রিটিক্যাল কেয়ার সোসাইটির গাইডলাইন অনুযায়ী প্রয়োজন অন্তত ১৮০ জন। এছাড়া রয়েছে ৩২ জন মেডিকেল অফিসার এবং ১০ জন কনসালটেন্ট, যাদের অনেকেই সরাসরি আইসিইউতে দায়িত্ব পালন করেন না।

নার্সদের তিন শিফটে কাজ করার কথা থাকলেও ছুটি ও অসুস্থতার কারণে প্রতিটি শিফটে নার্স সংখ্যা আরও কমে যায়। পাশাপাশি, মাত্র ১৪ জন ওয়ার্ড বয় ও ক্লিনারকে তিন শিফটে ভাগ হয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রোগী পরিবহনসহ বিভিন্ন সহায়ক কাজ সামলাতে হয়, যা সার্বিক ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তুলছে।

বিশেষজ্ঞদের মত: শয্যা বাড়ানো যথেষ্ট নয়, জনবলও চাই

চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, “শয্যা বাড়ানো রোগীদের জন্য বড় সুযোগ। তবে আইসিইউর রোগীদের অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হয়। সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য পর্যাপ্ত নার্স ও সহায়ক জনবল জরুরি।”

একজন দায়িত্ব পালনরত নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “একজন নার্সের ওপর একাধিক সংকটাপন্ন রোগীর দায়িত্ব থাকলে, মানসম্মত সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।”

প্রশাসনের আশ্বাস

হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, “আমরা জনবল সংকট পূরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রেখেছি। আশা করছি দ্রুতই এ ঘাটতি পূরণ হবে।”

ইতিহাসে নজর: দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল

১৯৬০ সালে মাত্র ১২০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে চমেক হাসপাতাল। তখন আইসিইউ ছিল মাত্র ৫টি। ২০০৫ সালে তা বাড়িয়ে ১২ করা হয়। এরপর ২০১৩ সালে সাধারণ শয্যা বাড়লেও আইসিইউতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০২০ সালের অক্টোবরে ১৫ বছর পর শয্যা বাড়িয়ে করা হয় ২০টি। ২০২৪ সালে একসঙ্গে যুক্ত হয় আরও ৩০টি শয্যা। অবশেষে ২০২৫ সালে চালু হলো আরও ৩০টি শয্যা, যার ফলে মোট সংখ্যা দাঁড়াল ৬০। আইসিইউ শয্যার সংখ্যা বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে মানসম্পন্ন ও নিরাপদ সেবা নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পর্যাপ্ত নার্স, চিকিৎসক ও সহায়ক কর্মী নিয়োগ। তা না হলে শয্যা বৃদ্ধির সুফল পুরোপুরি পাওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles